পুরো আমেরিকায় মাত্র একটা ইউনিভার্সিটি আছে, যারা ভর্তিকৃত প্রত্যেক স্টুডেন্টকেই ১০০% স্কলারশিপ দেয়। নাম বেরিয়া কলেজ (Berea College)।
প্রোটেস্ট্যান্ট
কৃশ্চিয়ান পরিচয়ে স্থাপিত এই বেরিয়া কলেজকে অনেকেই খ্রিস্টান-অনলি কলেজ
ভেবে থাকেন, আসলে কিন্তু তা না। বেরিয়া কলেজের অবস্থান কেন্টাকির বেরিয়া
শহরে, পাহাড়ে ঘেরা অ্যাপালাচিয়ান অঞ্চলে।
আন্ডারগ্র্যাডে কলেজ নির্বাচন করার সময় কিছু ফ্যাক্টর হিসাব করতে হয়। বেরিয়ার উদাহরণ দিয়ে সেগুলা ব্যাখ্যা করছি ।
প্রথমত:
“অ্যাডমিশন“ মানে বাসার মেইলবক্সে মোটা একটা খামের মধ্যে অভিনন্দন চিঠি
(offer letter)পাওয়া। আর তারপর টাকা জমা দিয়ে সিট পাকা করে ফেলাকে বলে
“এনরোলমেন্ট“। অ্যাডমিশন অফার করলে অবশ্যই এনরোল করতে হবে এরকম শর্ত মেনে
নেওয়াকে বলে “বাইন্ডিং”, এবং এরকম কলেজগুলো আর্লি ডিসিশনে ভর্তি নেয়।
নন-বাইন্ডিং হলো আর্লি অ্যাকশন।
বেরিয়া’র
আর্লি অ্যাকশন-১ এর ডেডলাইন নভেম্বর ১৫, আর আর্লি অ্যাকশন-২ এর ডেডলাইন
জানুয়ারি ৩১. সব শেষে রেগুলার ডিসিশনে আবেদনের শেষ তারিখ হলো মার্চ ৩১.
যারা এসএটি দেয়নি এবং সময় নিয়ে আবেদন করতে চাচ্ছে, তাদের জন্য এটা বেশ ভালো
একটা টার্গেট হতে পারে।
কিছু দরকারী টার্ম:
(ক)
অ্যাক্সেপ্টেন্স রেট: আবেদনকারীর শতকরা কত ভাগকে অ্যাডমিশন (প্লাস ১০০%
স্কলারশিপ) অফার দেওয়া হয়। বেরিয়ার জন্য সংখ্যাটা 30.3%, মানে এখানে চান্স
পাওয়া বেশ কঠিন।
(খ) অ্যাভারেজ জিপিএ: 4 এর মধ্যে 3.54; মানে বেশ ভালো স্টুডেন্টরা এখানে ঢোকে।
(গ)
কম্পোজিট এসএটি এর 75th পার্সেন্টাইল বা তৃতীয় কোয়ার্টাইল হলো 1210, তবে
বর্তমানে কোভিডের জন্য এরা এসএটি ছাড়াই অ্যাপ্লিকেশন নিচ্ছে।
(ঘ)
ইল্ড ভ্যালু বা এনরোলমেন্ট রেট: অ্যাডমিশন অফারকৃত স্টুডেন্টদের কত
পার্সেন্ট আসলেই এনরোল হয়। এই ভগ্নাংশটা যত বড় হয়, ওই কলেজ তত “ডিজায়ার্ড”
বলে বিবেচিত হয়, এবং কমপিটিশন বেশি থাকে। ইল্ড যত বেশি, কলেজের র্যাংক তত
উপরে। বিপরীত ক্রমে কম ইল্ড আছে এমন কলেজ ভর্তির চান্স পাওয়া সহজ হয়।
বেরিয়া’র ইল্ড ভ্যালু হলো 69%।
(ঙ)
এলটিই বা লাইকলিহুড টু এনরোল: এটা কলেজ কর্তৃক একজন স্টুডেন্টকে সংখ্যার
মাধ্যমে প্রকাশের উপায়। সহজ কথায় বলতে গেলে, যদি ওই স্টুডেন্টকে অ্যাডমিশন
অফার করা হয় তাহলে সে আদৌ ভর্তি হবে কি না এটা তার সূচক। তারা ইল্ড বাড়ানোর
জন্য যথাসম্ভব বেশি এলটিই আছে এমন স্টুডেন্টকে ধরতে চায়। ঠিক এই কারণে,
খুব হাই প্রোফাইল আছে, অ্যাপালাচিয়ান থেকে অনেক দূরে বাসা কিংবা খুবই
রিসার্চ অ্যামবিশাস এমন স্টুডেন্টকে তারা অ্যাডমিশন অফারই করবে না। আশা করি
এখন চিত্রটা পরিষ্কার হয়েছে হার্ভার্ড-ইয়েল থেকে অফারের সম্ভাবনা আছে এমন
স্টুডেন্ট অনেক সময় মাঝারি দিকের কলেজ থেকে রিজেকশন পায় কেন।
ভর্তির
সম্ভাবনা বাড়ানোর একটা বড় উপায় হলো এলটিই সূচক বাড়ানো। সেটা বাড়ানো যায় ওই
কলেজের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে। হাইস্কুলে থাকতেই অনেক স্টুডেন্ট
সামার ক্যাম্প করে বা কলেজ ট্যুর করতে আসে। কলেজ থেকে যত প্রমোশনাল ইমেইল
পাঠানো হয়, সেগুলো অন্তত: ওপেন করা, কারণ তারা এভাবে স্টুডেন্ট এর সাইকোলজি
বোঝার চেষ্টা করে যে আসলেই এই কলেজের ব্যাপারে কতটা আগ্রহী।
ঢাকার
হলি ক্রস, নটরডেম, মাদ্রাসা কিংবা আন্জুমানে মফিদুলের মতো মিশনারি/ওয়াকফ
প্রতিষ্ঠানগুলো প্রচূর অনুদান পায় এবং তারা চাইলে স্টুডেন্টদের কম খরচে
পড়াতে পারে। বেরিয়ার প্রায় 1.2 বিলিয়ন ডলারের বিশাল একটা এনডোমেন্ট ফান্ড
আছে। সেখান থেকে স্টুডেন্টদের স্কলারশিপের একটা সাপোর্ট আসে। স্টুডেন্টদের
আবার ক্যাম্পাসে কাজ করতে হয় (সপ্তাহে ১০ ঘন্টা), সেটার জন্য আলাদা
পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। এভাবেই তাদের টিউশনির টাকাটা মওকুফ করা হয়, কিন্তু
থাকা-খাওয়ার খরচটা বহন করতে হয়।
তারা
স্টুডেন্টদের জব মার্কেটে প্লেসমেন্টের জন্যও কাজ করে। অসম্ভব সুন্দর এবং
গোছানো একটা সিস্টেম। একটু সময় নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে আবেদন করলে এখানে
১০০% ফ্রি টিউশনিতে পড়ার বেশ ভালো সুযোগ রয়েছে
No comments:
Post a Comment